সুনামগঞ্জের ১০ টি কলেজ নামে মাত্র সরকারি

সুনামগঞ্জের ১০ টি কলেজ নামে মাত্র সরকারি
হুমায়ূন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) + স্টাফ রিপোর্টারঃ
সুনামগঞ্জের দশটি  উপজেলায় ১০ টি কলেজ চার বছর আগে সরকারিকরণ হলেও  কেবল ধর্মপাশা ও শাল্লা কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও শিক্ষার্থীরা সরকারি  সুবিধা পাচ্ছে না। এমনকি ধর্মপাশা ও শাল্লা কলেজ ছাড়া দীর্ঘদিন দিন ধরে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা কলেজ গুলোর শিক্ষক বৃন্দ আজ অবদি সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হননি। যার ফলে শিক্ষক -শিক্ষার্থী সহ জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
জানাযায়, ২০১৬ সালের ২০ শে জানুয়ারী সরকারি প্রজ্ঞাপনে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ কলেজ, বাদঘাট কলেজ, ছাতক ডিগ্রি কলেজ, বিশ্বম্ভরপুর দিগেন্দ্র বর্মণ কলেজ, পাগলা হাইস্কুল এন্ড কলেজ,
   শান্তিগঞ্জের পাগলা হাইস্কুল এ- কলেজ, জগন্নাথপুর ডিগ্রি কলেজ, শাল্লা কলেজ , ধর্মপাশা কলেজ ও দোয়ারা কলেজ সরকারি করনের ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৮ সালের ৮ ই আগষ্ট ঘোষণা অনুযায়ী এই কলেজ গুলো জাতীয়করণ করা হয়।অথচ জাতীয়করণ হওয়ার ৪ বছর অতিবাহিত হলেও আজ অবদি শিক্ষক -কর্মচারীরা সরকারি গেজেট ভূক্ত না হওয়ায় সরকারি সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া গত ৪ বছর ধরে এলাকাবাসী এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে “সরকারি ” শব্দ যুক্ত দেখলেও টিউশন ফি প্রদানে কেবল ধর্মপাশা সরকারি ডিগ্রি কলেজ  ও শাল্লা সরকারি কলেজ ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষার্থীরা ছাড় পায়নি।
জামালগঞ্জ সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৭ শত প্রায়। এই কলেজ সরকারি করনের আগে যে টিউশন ফি নওয়া হতো, এখনো সেটিই নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ একাদশ শ্রেনীতে টিউশন ফি ২ শত টাকা, ডিগ্রিতে ২শত ৫০টাকা ও অনার্স এর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নেওয়া হয় প্রতি মাসে ৫ শত টাকা।
অথচ ধর্মপাশা ডিগ্রি কলেজে ২০১৮ সাল থেকে একাদশ ও ডিগ্রিতে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ২৫ টাকা হতে ৩০ টাকা। শাল্লা সরকারি কলেজে ২০২১ সাল থেকে একাদশ ও ডিগ্রিতে টিউশন ফি নেওয়া হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা।
এবিষয়ে শাল্লা সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুশ শহীদ বলেন, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারী প্রজ্ঞাপনে  জানানোহয় কলেজ সরকারি করনের আওতায় নেবার কথা।
২০১৮ সালের ৮ আগষ্ট জাতীয় করণ হয়। গত ১৪ আগষ্ট শিক্ষকদের গেজেট ভূক্ত করে চিঠি পাঠানো হয়।২০ শে আগষ্ট নিয়মানুযায়ী আমরা যোগদান করেছি।আমাদের কলেজ সহ একসঙ্গে ১৮ টি কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের অর্থ বরাদ্দের চিঠিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গেছে। জাতীয় করণের প্রথম দিকে তারাও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর নিয়মে টিউশন ফি নিয়েছেন। গত বছর থেকে থেকে সরকারি নিয়মে টিউশন ফি নেওয়া হচ্ছে। তাঁর মতে শিক্ষকরা যেহেতু সরকারি নিয়মানুযায়ী বেতন-ভাতা পাবেন, সেহেতু বেসরকারি নিয়মে টিউশন ফি নেওয়া ঠিক হবে না। এবিষয়টি চিন্তা করেই তাঁরা টিউশন ফি কমিয়েছন।
ধর্মপাশা সরকারি কলেজ এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল করিম বলেন, কলেজ জাতীয় করন করা হয়েছে। শিক্ষকরা সেই অনুযায়ী বকেয়া বেতন পাবেন। তাহলে শিক্ষার্থী ফি বেশি নেব কেন। কলেজ জাতীয় করন এর ঘোষণার পর থেকেই সরকারি নিয়মে টিউশন ফি নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্বম্ভরপুর দিগেন্দ্র বর্মণ সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ  বিমলাংশুরায় বলেন, প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণ হওয়ার পর যেসব শিক্ষক মৃত্যু বরন করেছেন তাঁরা বকেয়া পাবেন না। যাহারা অবসরে গেছেন, তাঁরা বকেয়া পাবেন। তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠান জাতীয়করন হলেও কলেজ এর সকল খরচ চালাতে টিউশন ফি ছাড়া আজো অবদি কোন অর্থ পাওয়া যায়নি। যার ফলে আগের নিয়মে টিউশন ফি নেওয়া হচ্ছে। একেক কলেজে একেক রকমের টিউশন ফি আদায় করায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এমনকি অভিভাবক মহলে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক  শিক্ষার্থী ও অভিভাবক তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, কলেজ এর সাইনবোর্ডে “সরকারি ” শব্দ লেখা আছে। কিন্ত আমরা সরকারি সুযোগ- সুবিধা পাচ্ছি না। বেসরকারি নিয়মে টিউশন ফি দিচ্ছি। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য শিক্ষা বান্ধব জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
জামালগঞ্জ সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ রফিকুল বিন বারী বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক বেসরকারি সময়ের নিয়মানুযায়ী টিউশন ফি নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের জাতীয়করণের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত  শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সরকারি করনের সুফল পাচ্ছেন না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মোঃ আব্দুল মান্নান খান বলেন, একসাথে তিনশত এর বেশি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করন করা হয়েছিল। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তাতে প্রাথমিক প্রক্রিয়ার কাজ করে। শিক্ষা, সংস্থাপন ও অর্থ মন্ত্রণালয় ছাড়াও কেবিনেট ডিভিশন হয়ে এর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। নিয়োগের কাগজপত্র সহ নানা বিষয় নির্ভূল ভাবে যাচাই-বাছাই করতে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে।প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো জাতীয় করনকৃত প্রতিষ্ঠান এর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে।পর্যায়ক্রমে সবগুলোর প্রক্রিয়াই শেষ পথে।

আপনি আরও পড়তে পারেন